২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম পা রাখলেন কাটার মাষ্টার মুস্তাফিজুর রহমান। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ব্যাট হাতে ২২ গজে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানি ব্যাটাররা।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিজের হাতে বল তুলে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। শুরুটা ওয়াইড দিয়ে শুরু করলেও কিছুক্ষণ পরই নিজের ভয়ংকর রূপ দেখাতে শুরু করলেন তিনি।
প্রথম স্পেলে দুই ওভার করেন মুস্তাফিজুর রহমান। দিলেন মাত্র ৫ রান। এরপর আবারো বোলিংয়ে ফিরলেন। তখন অন্য প্রান্তে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে শহীদ আফ্রিদি। চতুর্থ বলেই এমন সুইং করালেন, আফ্রিদি তো বটেই, আম্পায়ারও বোকা বনে গেলেন! আফ্রিদিকে দিয়েই টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেটের খাতা খুললেন এ কাটার মাস্টার।
ইনিংসের শেষ দিকে ১৮তম ওভারে এসে পঞ্চম বলে মোহাম্মদ হাফিজকে এলবিউডব্লিউ এর ফাঁদে ফেলে সাজ ঘরে ফেরালেন। নিজের অভিষেক ম্যাচেই বল হাতে দেখালেন ঝলক। চার ওভারে ২০ রান খরচ করে তুলে নেন ২ উইকেট।
এভাবেই অভিষেক ম্যাচে আলো ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখেন কাটার মাষ্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এসব ম্যাচে ৯৯ উইকেট শিকার করেছেন এ পেসার।
অভিষেকের বছরেই পাঁচটি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন মুস্তাফিজ। ওই বছরে ১৯.৩ ওভার বল ঘুরিয়ে রান দেন মাত্র ১১২। এর পাশাপাশি ৬টি নিয়েছেন উইকেট।
পরের বছর ছিল মুস্তাফিজের জ্বলে উঠার গল্প। ২০১৬ সালে ৮ ম্যাচে খেলে শিকার করেন ১৬ উইকেট। এ বছর ক্যারিয়ার সেরা ২২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন কাটার মাস্টার।
এরপর ২০১৭ সালে ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ২০১৮ সালে খেলেছেন ১৩ ম্যাচ। ৪৫.১ ওভার হাত ঘুরিয়ে নেন ২১ উইকেট, রান দিয়েছিলেন ৪৪৪।
২০১৯ সালে ৭ ম্যাচে মাত্র ৪ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর। এ সময় ২৪.৪ ওভার বল ঘুরিয়ে তিনি রান দিয়েছিলেন ২১৭। ২০২০ সালে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এ পেসার। ৪ ম্যাচে নেন ৬ উইকেট।
এরপর ২০২১ সালে সবমিলিয়ে খেলেছেন ২০ ম্যাচ। এসব ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ২৮টি। এ পর্যন্ত তবুও ঠিক ছিল। কিন্তু গেল বছর থেকে চেনা ছন্দে ফিরতে ব্যর্থ হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। গত বছর বেশ খরুচে বোলিং করেছেন তিনি।
২০২২ সালে মোট ১৬ ম্যাচে ৫৯ ওভার করে ৪৫১ রান দিয়ে মাত্র ১২ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার ইকোনমি ছিল ৭.৬৪। যা ক্যারিয়ারের শুরুর চেয়ে ওভারপ্রতি প্রায় ২ বেশি। শুরু দিকে ৫.৭৪ ইকোনমি রেটে বল করেছেন কাটার মাস্টার।
২০২২ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে খেই হারিয়ে ফেলেন ফিজ। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে ইনজুরি পরবর্তী সময়ে নতুন বোলিং অ্যাকশন। যদিও নতুন অ্যাকশনে সবশেষ আইপিএলে তিনি গতি তুলেছেন বেশ। তবে রান-আপ থেকে তৈরি হওয়া ভরবেগটা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছেন না এ বোলার।
ডেলিভারির সময় ব্যাক-ফুট কন্ট্যাক্টে ভগ্নাংশ সময় বেশি কাটিয়ে ফেলছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এই সময়টুকু কমিয়ে আনতে পারলে রান আপের রৈখিক গতিকে আরো দ্রুত কৌণিক গতিতে রুপান্তরিত করতে পারবেন তিনি। চাইলে আদর্শ হিসেবে নিতে পারেন শাহীন শাহ আফ্রিদি, জশ হ্যাজলউডদের।
যে কাটার দিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানবিখ্যাত হয়েছিলেন, সেই কাটার করাও দুরূহ এখনকার অ্যাকশনে। তবে তার কাটারের জাদু কমেনি এখনো। অবশ্য তার ডানহাত নিয়ে কাজ করা জরুরি। এভাবে কাজ করলে নিজেকে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আনতে পারবেন তিনি।